Wednesday, March 12, 2008

ওদের বেড়ে উঠা

১. স্মিতহাসিনীর ভ্রুক্ষেপ নেই...কেশ বিন্যাসে


আজকাল প্রায়শই আয়নার সামনে দাড়ানো হত, একটু আধটু বাড়ন্ত চুল নাড়া চড়া করা। কখনো দাঁত মিলিয়ে নেয়া। আম্মু তো প্রায়ই বকা ঝকা করে যাচ্ছিল, শাসনের বাধুনি যতটুকু সম্ভব তার চেয়ে বেশি হয়ে যেতো মাঝে মাঝে। কিন্তু স্মিতহাসিনী তার নিজের মতো করে সব কিছু ম্যানেজ করে নিচ্ছিল। কখনও বেমালুম ভুলে গিয়ে, কখনো আব্বুর কাছে একটু অভিমানে, একটু কান্নায় অনেক আবদার জায়েজ করে নেয়ার কৌশল তার জানা হয়ে গেছে।



কিন্তু কতদিন আর সামলে রাখা যায় যেখানে গৃহকর্ত্রীর রোষানল থাকে। এবারের মান্থলী টেস্টের রেজাল্ট বেরোতেই প্রথম ধাক্কা.............


স্মিতহাসিনী অংকে একুশ, বাংলায় সাড়ে বিশ আর ইংরেজীতে তেইশ। পঁচিশের হিসেবে সংখ্যাগুলো তেমন ছোট নয় তবুও যথারীতি ঝড়। ঝড়ের প্রথম ধাক্কায় সিদ্ধান্ত ওর চুল কর্তন । যত দোষ নন্দ ঘোষ............আর কেউ নেই।



পড়ালেখায় গোল্লায় গেছে সেই চুল বিন্যাস। সেদিন সন্ধ্যায় কাল-বিলম্ব না করে চুল-বিন্যাস, বয়কাট....
বেচারী !! কন্যা হইয়াও পুত্র বেশ ধারনে অপমানিত। কান্না কান্না মুখাবয়বে অভিমানী চোখ আমার দিকে তাকায়। আর বেশি কিছু তো বলে না। আমার এই কন্যাটি সহজেই মানিয়ে ফেলে অবস্থানের সাথে। তাই তার অভিমানও ক্ষনস্থায়ী।



এর পর ঝড়ের দ্বিতীয় ধাক্কা আমার উপর, আমার প্রশ্রয়ে তার এই শিক্ষাবনতি। এন্তার অভিযোগ, কন্যা লালন-পালনে সহযোগিতা প্রদানে আমার ব্যর্থতার সংক্ষিপ্ত অভিযোগনামা। তারপর নির্দেশনা, আগামী কাল যেন স্কুলে গিয়ে তার এক্সাম পেপারগুলি দেখে আসি । আর একটি পূংখানুপূংখ তথ্য জেনো প্রদান করি।



আর কি করা, এমনিতে প্রতিটি মান্থলী টেস্টের পর এক্সাম পেপার দেখার একটা সুযোগ দেয়া হয় এবং এতদিন তা করে আসছিলেন মহামান্য গৃহকর্ত্রী । তবে গত দু'বার সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কারন দূর্ঘটনাজনিত। তিনি দূর্ঘটনাজনিত কারনে চিকিৎসক মহোদয়ের পরামর্শ পালন করছেন। গৃহনিবাসে আপাতত নির্বাসিত বলা যায়। (সেই দূর্ঘটনাজনিত গল্প আরেক দিন না হয়...)।


যথারীতি নির্ধারিত দিন স্কুলে গমন। এক্সাম পেপার দেখে আমার মাথায় হাত। প্রিয় স্মিতহাসিনী ভালোই পরীক্ষা দিয়েছে এবং সবগুলি প্রশ্নের সম্পূর্ন উত্তর দিয়েছে। যে ত্রুটিগুলো আমার চোখ পড়ল....



" কানা বগীর ছা ............ এখানে সে আকার দিতে ভুলেছে। তাই কানা বগীর ছ



"ইহা হয় একটি পাখা............এখানেও... ইহা হয় একটি পাখ



এমনি মাঝে মাঝে দু'একটা মৃদু ত্রুটিই তার শিক্ষাবনতির কারন।



সময় মতো রিপোটিং টাইম। আলোচনা এবং আমার প্রাত্যাহিক স্কুল রিপোর্টিং নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য দিতে বাধ্য হলাম আর রিপোর্টিং শেষে এক সদস্য বিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত হল অস্থির চিত্ত,অতিরিক্ত অমনোযোগিতা এবং মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাশন সচেতনতা একসাথে এই পরিনতির কারন এবং তা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে ওর আচরনে। নইলে গৃহে প্রতিনিয়ত টিউটর এবং মাতৃ-সংযোগ দুটোর সহযোগে বেশ ভাল মত রপ্ত ছিলো সবকিছ। তাহলে কেন পরীক্ষা পত্রে এই অবস্থা ??



কারনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শুরু হল মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহন। নতুন কর্মশালা। আগামীর জন্য প্রস্তুতি। নতুন করে ওর খাদ্যাভাস, পড়ার সময়সূচী নির্ধারন এবং স্কুল আচরনসম্পর্কিত বিধিমালা। এর মাঝে বেচারীর বেনী বাধার স্বপ্ন আপাততঃ সুদূর পরাহত। ঝুঁটি বাধা স্মিতহাসিনী নিয়ে স্কুলে যাওয়া হবে না এটাই ভাবতে ভাবতে আমারো মনটা কিঞ্চিত ধূসর হয়ে গেলে আরেকবার তাকাই তার দিকে।
দেখি, সে বয়কাট অবয়ব নিয়ে দিব্ব্যি আছে,

সব ভুলে আবার মত্ত তার নিত্য সারল্যে...
স্মিত হাস্যে.........নেই কোন ভ্রুক্ষেপ

2 comments:

Samran said...

ei lekhata porte parlam na, font bhanga bhanga dekhte pachchhi, anyogulo dibyi thikthak!

একজন মানুষের উপাখ্যান said...

Font jonito somossa holey Blog er link theke font download kore nite paro...asa kori somossa hobey na...