Friday, April 4, 2008

তোমার সাথে জড়ানো আমার ছোট ছোট অনুভূতিগুলো


কচি ঘাসের উপর দিয়ে হাটা শুরু করতেই যান্ত্রিক আওয়াজ কানে এসে লাগতে লাগলো। যন্ত্রেরা কাঁদছে।

প্রিয় নন্দিনী তোমাকে দেখলাম প্রিয় দেবদারুর পাশে দাড়িয়ে। শাদা শাড়ী বাসন্তী পাড়ে। বাতাসে উড়ছে অনেকখানি আঁচল।

উড়ছোই যখন বিনদাস উড়তে থাকো। বেমালুম হয়ে যাও অশরীরী।

অশরীরী, অবাক হলে ? অবাক হতে নেই যখন পুরোটা এলিয়ে আছো। এলিয়ে দেয়া তনু বাঁকে বাঁকে কেঁপে উঠছে। কাঁপছে ইথার তরঙ্গ । হেটে চলা মাইক।

অন্য ফুটপাতে বাদ্যযন্ত্রেরা মিছিলে মিছিলে মুখরিত। তুমি দাড়িয়ে । সমাগত জনতা ভিড় জমিয়েছে জারুল গাছের ছায়ায়।

জারুল গাছ বেশ এলোমেলো হয়ে আছে মেহগনি প্রচ্ছদে। প্রচলিত সব রং আছে তবুও দেহহীন কবুতর। কবুতরেরা ছড়ানো ধানের ক্ষেতে নিজেরা খোশগল্পে।

হাটছে এক র্ফালং পদ চিহ্ন । প্রতিটি পদে একটা একটা তৈলচিত্র। আলতা রং ছুঁয়ে সম্ভ্রমে সিক্ত। হাটুরা ডুবছে অনাবাদী বুকে।



আজ ভাবছি রোড ম্যাপ এঁকে দেব আল ধরে। আলেরা যখন ফুটপাত ছোঁয়। ফুটপাত যখন সমান্তরাল হয়ে যায় পিচঢালা সড়ক ধরে। সাঁই সাঁই করে ছুটে যায় যান্ত্রিক পা গুলো।

যে নদীটার কথা বলেছিলে, তার তীর ঘেষে একটা সাইডওয়ে চলে গেছে খামারবাড়ী। এই বাড়ির আঙ্গিনায় অনেকগুলি ফলের গাছ। তুমি জামরুলের কথা বলতে। মাঝে মাঝে জলপাই রং এর কথা । সেখানেই বিশাল একটি জলপাই গাছ ডানা মেলে আছে।

তুমি চাইতে খামারবাড়ী। আমি চাইতাম সফেদ বাড়ি। বিস্তর ব্যবধান ছিলো রংয়ে।

আমার উঠোনে একটা কামিনী ছিলো। তোমার ছাদের রেলিং ঘেষে আমাজান অর্কিড । আমি একটি শাল বন চেয়েছিলাম। হাস্নাহেনা আর সেগুন ছায়া বেশ চাইতাম। তুমি লাগোয়া ওয়াইড স্ক্রিন।

কোনার ঐদিকে একটা নারকেল গাছ ছিলো। ঝড়ের রাতে ডালেরা নড়ে উঠতেই লেপ্টে যেতো স্লিপিং গাউন। মনে হতো আলেরা মাটির বুক চিড়ে অদৃশ্য । সীমাহান দৃষ্টিতে একাকার বিছানো বেডশীটগুলো কাঁপছে।


গতবছর থার্টিফাস্টে একত্রিশটা বাজনার ঝড় তুলেছিলে তোমার কোমল লনে। বাজনারা উম্মাতাল ছিলো। ছড়ানো কাঁচের শিশিগুলো দেয়ালে ঠায়।

কেবিনেটে তোলা হলো তালা ভাংগা রাত। রাতেরা লোকাট হতেছিলো গভীরতর স্বাদে। ঘেমে ঘেমে ঘামছি আর্দ্রতা আর বেশুমার বায়বীয়তায়। ক্যাটওয়াক সেরে সিনোরিটা তুমি দাপিয়ে বেড়িয়েছিলে এক পাতা আলিঙ্গনে। আলিঙ্গনে রংধনু কেলভিন শার্টের কাঁধ।

দাড়ানো ইয়ার্ড ল্যাম্প। আমি ও দাড়ানো । ডেকেছিলাম ইশারায়। এসেছো শেষ রাতে। ধীরে ধীরে নেমে আসা সিফনেরা মাটি ছুতেই।

ওহ ডার্লিং, তুমি একা একা করছোটা কি? চলো না। দেখোনা সবাই কত্তো মজা করছে। কাম অন বলতেই জড়িয়ে আমার বুক। থেমে গেলে নিস্তব্ধ সমর্পনে।

আমি শুনছি। ক্রমাগত শুনছি । উঠছেই আর নামছেই। সিসমোগ্রাফে ক্রমাগত দুলুনির রেখা । ধক ধক করে বাঁজছে বাজনারা বুকের মাঝে।



সকাল সাতটা। আড়মোড়া ভাংলো আলতো কিশোরী আলোরা । নেমে আসতো সাইড টেবিল অবধি।

আর ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে আটটা হতেই একটা আরশোলা হেটে গেলো কিচেনের দিকে। কিচেনটা বেশ গুনগুন করছে আজকাল। রেশমী চাঁদরে ঢেকে আছো হয়তো তুমি।

শরীরটা লেগে আছে রেশমের সাথে। তুমি হয়ে আছো রেশম পোকা। সিল্ক ওয়ার্ম এই নামে বেশ মানায়। মনে পড়লো ওয়ার্ম বলতেই তুমি দৌড়ে পালাও। যে কোন দিকে।

গতবার একটা গুবরে পোকা ঢুকে পড়েছিলো জানালার ফাঁক দিয়ে। এরপর সারারাত একটা সরল রেখা হয়েছিলো তুমি যোগ আমি।

সমীকরনটা মাঝে মাঝে বেসুরো করে ফেলো। আমি খুব একটা অবাক হই না। হতে নেই। এই সকালটাকে নিয়ে বেশ ভয় যে। কখনো একটা যোগের সাথে আরেকটা বিয়োগ। কখনো সবকটি যোগ মিলে অসীমের দিকে ধাবমান। কখনো সবগুলি বিয়োগ। কখনো এমন কিছু সংকেত জুড়ে দাও আমি সমাধান নিয়ে ভাবতেই সংকোচ বোধ করি।

ডাইনিং টেবিলের পাশটা যতটা বাড়ে ততটা ছোট করে ফেলছি বাচনশৈলী।


বুকশেল্ফ চওড়া বুক অবধি ছিলো। দাড়ালে হাত দিয়ে নাগাল পেতাম অপ্সরা। অপবাদে লাঞ্ছিত হাত কাটা ব্লাউজ।

লাশকাটা ঘরে প্রায়শই তোমার কথা হতো। টুপ করে একটা বোতাম খসে পড়তেই পাবলোর কথা মনে হতো। প্রায়শই জীবন্ত মডেলগুলি পায়চারিরত।

শর্মী, তোমার মনে আছে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের কথা? কিংবা ফায়ারপ্লেস। আবদ্ধ বেডরুম থেকে কিচেন । কিচেনের খোলা সিংক। শাওয়ারে গুনগুন বিয়োন্স।

ষ্টেইনলেস ছুড়িগুলো বেমক্কায় কেটেছিলো তোমার অপরুপ অনামিকা। তুমি কেঁদেছিলে। রক্তেরা ফোঁটাগুলো দেখে লাশকাটা ঘরের কথা মনে পড়েছিলো।

ফ্যাসিনেটেড লালরঙ দেখে তুমি হেলুসিনেশানে ভুগতে। সান্ধ্যরাতের মাদকতায় খোলা বই ডিভানজুড়ে ছড়ানো দেখে কেঁপে উঠতো কিছু অলিখিত পদাবলী।

আমি তর তর করে ঘেমে গেলে বলতে আর্দ্রতা কেন তোমাকে ছোঁয়না।


নীল রং নিয়ে তোমার বেশ আক্ষেপ ছিলো। কেন সব রং নীল হয় না। লাল লিপস্টিক প্রায়ই তোমার বিরাগভাজন হতো। শপিং মলে গেলে এড়িয়ে যেতে।

ফ্রেশনারগুলো সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকতো তোমার শাওয়ার এর ভিস্যুয়াল সাক্ষী হিসেবে। সারিবদ্ধ লরেলের কৌটোগুলো ঘেমে যেতো।

দেয়ালে এঁকে যাওয়া ফেনিল সৌরভে তুমি ঝরতে। একটা একটা মুক্তো বিছানো টাইলসগুলো নীল হতো গভীর বেদনায়। অ-পাওয়া অনুভূতিতে বৃষ্টির ফোঁটা নামতো তোমার দেহ গড়িয়ে।

টাওয়েল জড়ানো টাওয়েলিকা । আমি তাই বলতাম টাওয়েল মানবী । কখনো টাওয়েলিকা। খোলাচুল। টুপ টাপ দু’এক ফোঁটা পড়ে যাওয়া মাটিতে।

লাল মখমলে মিশে যেতো তোমার স্পর্শ।

ছ.
বৃষ্টি নিয়ে আমাদের দুজনের একটা মিল ছিলো। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ। ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে ইচ্ছে করে ভেঁজা। আলুথালু আঁচলেরা লেপ্টানো বইয়ের পাতায় । শুকনো ফুলেরা যেমন তেমনি বহুকাল ।

প্রথম শীতে এক বিকেলে আমাদের ছাদে ফোঁটা একটা লাল গোলাপ তোমাকে দিয়েছিলাম । সেই গোলাপ পাপড়ি রেখে দিয়েছিলে ময়ুরাক্ষীর পাতায়। সেটা আজো সেখানেই আছে। যতবার উল্টাই ততবার মনে পড়ে ।

বর্ষার তুমুল বৃষ্টি কিংবা বৈশাখীর শিলাবৃষ্টি যখনি তোমার কথা মনে পড়ে বুক শেল্ফ খুলে বসি। খুঁজে নেই ময়ুরাক্ষী আর সেই গোলাপ পাপড়ি।

মনে পড়ে ছোট ছোট ক্ষন। তোমাকে নিয়ে আমার অনুভুতিগুলো।

আর জানতে ইচ্ছে হয়, কেমন আছো তুমি আমিবিহীন।

1 comment:

Shoummo said...

eta thik moto dhorte pari nai..
javed vai..kindly font gulo arektu boro koren..pls..